মূল বিষয়ে যান
Background Image

ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম স্ক্যাম থেকে সাবধান: আমার অভিজ্ঞতা এবং ৮,৫৬০ টাকা হারানোর গল্প

·607 টি শব্দ·3 মিনিট· loading · loading · ·
বিষয়সূচী

আমার গল্প: কিভাবে আমি প্রতারণার শিকার হলাম
#

২৫শে ফেব্রুয়ারি আমি দৈনিক ভাস্কর পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখি যেখানে জিও কোম্পানিতে বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগের কথা বলা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনটি বেশ আকর্ষণীয় মনে হওয়ায় আমি দ্রুত প্রদত্ত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করি।

ফোনে থাকা ব্যক্তি খুবই পেশাদার ভঙ্গিতে কথা বললেন এবং জানালেন যে কাজের জন্য আমাকে একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন দেওয়া হবে।

তবে, ডিভাইসগুলো পাওয়ার আগে আমাকে ₹৮,৫৬০ টাকা “ইনস্যুরেন্স ডিপোজিট” হিসাবে জমা দিতে হবে বলে জানানো হলো। তারা আশ্বাস দিলেন যে এই টাকা সঙ্গে সঙ্গেই (প্রায় আড়াই মিনিটের মধ্যে) ফেরত দেওয়া হবে। তাদের কথায় বিশ্বাস করে আমি টাকা পাঠিয়ে দিলাম।

কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফোন করে জানালেন যে আমি নাকি ভুল করে ₹৮,৫৬০-এর পরিবর্তে ₹৮,৫০৭ পাঠিয়েছি। তারা তৎক্ষণাৎ বাকি টাকা পাঠাতে বললেন যাতে আমার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা যায়। এই সময়ে আমার মনে সন্দেহ জাগতে শুরু করল।

আমি লেনদেনটি ভালোভাবে যাচাই করে দেখলাম যে আমি সঠিক অঙ্কই পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের আচরণ হঠাৎ বদলে গেল। তারা নানা অজুহাত দিতে লাগলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কল ও মেসেজের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তখনই বুঝতে পারলাম আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।


প্রতারণা কীভাবে হলো
#

এ ধরণের প্রতারণা খুবই সাধারণ এবং প্রতারকরা চতুর কৌশলে নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলেন। সাধারণত তারা এভাবে কাজ করে:

  1. ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন: প্রতারকরা পত্রিকা, ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। তারা প্রায়ই জিও-এর মতো বড় কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বিশ্বাস অর্জন করে। কখনও কখনও অফিসিয়াল দেখানোর মতো নথি বা ওয়েবসাইটও বানায়। চাকরিপ্রার্থীরা সুযোগের আশায় যোগাযোগ করেন, সন্দেহের সুযোগও থাকে না।
  2. প্রাথমিক যোগাযোগ ও বিশ্বাস অর্জন: তারা ভদ্র ও পেশাদার ভঙ্গিতে কথা বলে ভুক্তভোগীর আস্থা অর্জন করে। কখনও একাধিক কল, ইমেইল বা ভুয়া চাকরির অফার লেটারও দেয়। প্রায়ই বলা হয় সীমিত আসন খালি আছে, তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুক্তভোগী বুঝে ওঠার আগেই টাকা পাঠিয়ে ফেলেন।
  3. অগ্রিম টাকা দাবি: তারা দাবি করে যে চাকরি পেতে হলে ইনস্যুরেন্স, সিকিউরিটি ডিপোজিট বা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। বলে যে কোম্পানি ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন দেবে, আর এই টাকা পরে ফেরত দেওয়া হবে। আসলে টাকা পাঠানোর পর তারা হয় আরও টাকা দাবি করে (ভুল অঙ্ক পাঠানোর অজুহাতে) অথবা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
  4. জরুরি পরিস্থিতি তৈরি: তারা এমনভাবে বোঝায় যাতে ভুক্তভোগী চিন্তা করার সময় না পান এবং দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেন।
  5. ভুয়া ভুলের অজুহাত: প্রথম টাকা পাঠানোর পর তারা বলে অঙ্কে ভুল হয়েছে অথবা বাড়তি প্রসেসিং ফি দিতে হবে। এতে ভুক্তভোগী আবার টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। একসময় বুঝতে দেরি হয় যে প্রতারিত হয়েছেন।

সতর্ক থাকার সংকেত
#

  • 🔴 অগ্রিম টাকা দাবি: কোনো বৈধ কোম্পানি চাকরির জন্য আগে টাকা চায় না।
  • 🔴 অবাস্তব প্রতিশ্রুতি: শুধু যোগ দিলেই ল্যাপটপ ও মোবাইল পাওয়া সন্দেহজনক ছিল।
  • 🔴 চাপ সৃষ্টি করা: সামান্য অঙ্ক কম পাঠানো হয়েছে বলে জরুরি ভিত্তিতে আবার টাকা চাইছিল।
  • 🔴 স্বচ্ছতার অভাব: প্রশ্ন করার পর যোগাযোগ বন্ধ করা ছিল স্পষ্ট সতর্ক সংকেত।

এ ধরণের প্রতারণা এড়ানোর উপায়
#

নিজেকে এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে নিচের সতর্কতাগুলো অনুসরণ করুন:

  1. কোম্পানি যাচাই করুন: চাকরির অফার পাওয়ার আগে কোম্পানিটি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিন। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন, রিভিউ পড়ুন এবং যোগাযোগের নম্বর যাচাই করুন। কোম্পানির অফিসিয়াল ক্যারিয়ার পেইজে যদি বিজ্ঞাপন না থাকে, তবে সতর্ক হোন। সরাসরি কোম্পানির এইচআর বিভাগের সাথে যোগাযোগ করুন।
  2. অগ্রিম টাকা দেবেন না: কোনো বৈধ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, সরঞ্জাম বা ইনস্যুরেন্সের জন্য টাকা নেয় না। যারা টাকা চাইবে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  3. সতর্ক সংকেত চিনুন: উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো মাথায় রাখুন।
  4. যোগাযোগের মাধ্যম যাচাই করুন: ভুয়া নিয়োগকর্তারা সাধারণ ফোন নম্বর বা জিমেইল ব্যবহার করে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করুন।
  5. তাড়াহুড়া করবেন না: প্রতারকরা সবসময় চাপ তৈরি করে। সময় নিয়ে চিন্তা করুন।
  6. সন্দেহজনক কার্যকলাপ রিপোর্ট করুন: প্রতারণার আশঙ্কা হলে cybercrime.gov.in এ অভিযোগ করুন। এছাড়াও আপনার ব্যাংক ও নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন।

সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন। আপনি যদি প্রতারণার শিকার হন, চুপ থাকবেন না—সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করুন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।

Related

ইনস্টাগ্রামে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম প্রতারণা: কীভাবে আমি টাকা হারালাম এবং আপনাকে কী জানা উচিত
·451 টি শব্দ·3 মিনিট· loading · loading