মূল বিষয়ে যান
Background Image

সস্তা ঋণের ফাঁদ: আমার অভিজ্ঞতা ও বাঁচার উপায়

·582 টি শব্দ·3 মিনিট· loading · loading · ·
বিষয়সূচী

আমার গল্প: কিভাবে আমি প্রতারিত হলাম
#

কয়েকদিন আগে, আমি একটি বার্তা পেয়েছিলাম যা দেখতে ব্যাংক অফ বরোদা থেকে এসেছে বলে মনে হচ্ছিল। বার্তায় আমাকে ₹৫ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বার্তাটি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ায়, আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন থাকায় আমি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

ওপাশের ব্যক্তি আমাকে জানালেন যে ঋণ অনুমোদনের আগে আমাকে ₹১,৬৫০ প্রসেসিং ফি দিতে হবে। টাকাটা খুব বেশি মনে হয়নি, তাই আমি কোনো দ্বিধা না করে পরিশোধ করে দিলাম। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরপরই তারা বিভিন্ন অজুহাতে আরও টাকা চাইতে লাগল—কখনো ডকুমেন্টেশন, কখনো ভেরিফিকেশন, আবার কখনো “ফাইনালাইজেশন চার্জ” হিসেবে।

প্রতিবারই তারা আমাকে আশ্বস্ত করত যে আমার ঋণ প্রায় অনুমোদিত, শুধু শেষ ধাপটা বাকি আছে। এই ভরসায় আমি টাকা দিয়ে যেতে থাকলাম।

অবশেষে, যখন বুঝলাম আমি ইতিমধ্যেই অনেক টাকা দিয়ে ফেলেছি কিন্তু ঋণ এখনো পাইনি, তখন আমি সরাসরি তাদের জবাবদিহি চাই। তখনও ঋণ অনুমোদন না করে আমাকে বলা হল, আমি যদি ₹৫,৪০০ জমা দিই তাহলে এতদিনে দেওয়া সব টাকা আমাকে ফেরত দেওয়া হবে। সেখানেই আমার উপলব্ধি হল—আমি প্রতারিত হয়েছি।


কিভাবে এই ঋণ জালিয়াতি ঘটল
#

এখানে এক নজরে দেখা যাক কিভাবে প্রতারকরা এমন প্রতারণা চালায়:

  1. ভুয়া ঋণের প্রস্তাব এসএমএস, কল, সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপে: প্রতারকরা বার্তা পাঠায় বা কল করে প্রি-অ্যাপ্রুভড লোনের প্রলোভন দেয়, প্রায়ই পরিচিত ব্যাংকের নামে। এই ভুয়া প্রস্তাবগুলো সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, অনলাইন বিজ্ঞাপন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম চ্যানেল ইত্যাদিতেও দেখা যায়। তারা পেশাদার ভাষা ব্যবহার করে প্রস্তাবটিকে বৈধ শোনায় এবং ভুক্তভোগীদের দ্রুত সাড়া দিতে চাপ দেয়।

  2. ছোট অঙ্কের প্রাথমিক প্রসেসিং ফি: ভুক্তভোগী আগ্রহ দেখালে প্রথমে একটি ছোট ফি চাওয়া হয়। যেহেতু আসল ঋণেও কখনো ছোটখাটো ফি থাকতে পারে, তাই অনেকেই সন্দেহ করে না। ছোট অঙ্কটি ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয় যাতে মানুষ সহজে টাকা দেয় এবং পরবর্তীতে বড় অঙ্ক দিতেও আগ্রহী হয়।

  3. বারবার নতুন চার্জের অজুহাত: প্রথম টাকার পর প্রতারকরা একের পর এক নতুন খরচের কথা বলে—ডকুমেন্টেশন ফি, লোন ইনস্যুরেন্স, সরকারি কর, ব্যাংক প্রসেসিং চার্জ ইত্যাদি। প্রতিবার বলা হয় এটি শেষ ধাপ। এভাবে মানুষকে বারবার টাকা দিতে প্রলুব্ধ করা হয়।

  4. রিফান্ডের প্রলোভন: ভুক্তভোগী যখন প্রশ্ন করতে শুরু করে, তখন প্রতারকরা ফেরতের কথা বলে। দাবি করা হয়, শেষ একবার টাকা দিলেই এখন পর্যন্ত দেওয়া সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু এই রিফান্ড কখনোই হয় না।

  5. হাওয়া হয়ে যাওয়া: যথেষ্ট টাকা আদায়ের পর প্রতারকরা একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যায়, হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইল মুছে যায়, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট অদৃশ্য হয়। তখন ভুক্তভোগীর কাছে প্রতারণার বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হয়, কিন্তু তখন আর টাকা ফেরানোর কোনো উপায় থাকে না।


সতর্ক সংকেত: কখন সাবধান হবেন
#

  • 🔴 অগ্রিম টাকা চাওয়া: ঋণ অনুমোদনের আগে প্রসেসিং ফি দেওয়ার অনুরোধ।
  • 🔴 বারবার অতিরিক্ত চার্জ: নানান অজুহাতে বারবার টাকা দাবি।
  • 🔴 মিথ্যা আশ্বাস ও চাপ: বারবার বলা হচ্ছে ঋণ “প্রায় অনুমোদিত”।
  • 🔴 রিফান্ডের চালাকি: ইতিমধ্যেই দেওয়া টাকা ফেরত পেতে আরও টাকা জমা দিতে বলা।

কিভাবে নিজেকে ঋণ প্রতারণা থেকে রক্ষা করবেন
#

  1. সূত্র যাচাই করুন: কোনো ঋণের প্রস্তাব পেলে সরাসরি অফিসিয়াল ব্যাংকের ওয়েবসাইট বা কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ব্যাংক কখনোই এলোমেলোভাবে এসএমএস, কল বা সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঋণ দেয় না।
  2. আসল ঋণে অগ্রিম টাকা লাগে না: বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কখনো ঋণ অনুমোদনের আগে প্রসেসিং ফি বা অগ্রিম টাকা চায় না।
  3. অফিশিয়াল নয় এমন যোগাযোগে সতর্ক হোন: হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যক্তিগত নম্বর থেকে আসা ঋণের প্রস্তাব সন্দেহজনক। সবসময় দেখুন প্রতিষ্ঠানটি আরবিআই-তে নিবন্ধিত কিনা।
  4. সতর্ক সংকেত খেয়াল করুন: উপরে উল্লেখিত সতর্ক সংকেতগুলো মনে রাখুন।
  5. অন্তর্দৃষ্টি বিশ্বাস করুন: প্রস্তাবটি যদি খুবই আকর্ষণীয় মনে হয় বা কোথাও অস্বস্তি লাগে, তবে থেমে যাচাই করুন। প্রতারকরা মানসিক চাপ দিয়ে টাকা আদায় করে।
  6. সন্দেহজনক কার্যকলাপ সাথে সাথে রিপোর্ট করুন: প্রতারণার শিকার হলে cybercrime.gov.in পোর্টালে অভিযোগ জানান। পাশাপাশি ব্যাংককে জানিয়ে নিকটস্থ থানা বা সাইবার পুলিশ স্টেশনে যান।

Related

প্রতারক ফোন কল থেকে সাবধান: আমি কীভাবে ₹৮৫,০০০ হারালাম
·421 টি শব্দ·2 মিনিট· loading · loading