আমার গল্প: কিভাবে আমি প্রতারণার শিকার হলাম#
১০ই এপ্রিল ২০২৫-এ আমি ইনস্টাগ্রামে একটি ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাই যার নাম ছিল rider_helmet_store। সেখানে বাইকের অ্যাকসেসরিজ বিক্রি হচ্ছিল। প্রোফাইলটি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল—অনেক অনুসারী ও গ্রাহকদের প্রশংসাসূচক মন্তব্য ছিল। একটি হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাকাউন্টও লিঙ্ক করা ছিল, এবং আমাকে সেখানে গিয়ে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে বলা হয়।
হোয়াটসঅ্যাপে আলোচনা করার পর আমি ₹২,৮০০ টাকায় একটি হেলমেট কেনার সিদ্ধান্ত নিই। বিক্রেতার পেশাদার ভঙ্গি এবং বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি দেখে আমি ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিই।
কিন্তু টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্রেতার ফোন নম্বর বন্ধ হয়ে যায়। তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ১২ দিনেরও বেশি কেটে গেছে, কিন্তু হেলমেট এখনও আসেনি। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে অনলাইনে প্রতারণা কতটা নিখুঁতভাবে সাজানো হতে পারে—even যখন বিক্রেতা খুবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
এই অনলাইন ক্রয় প্রতারণা কীভাবে ঘটল#
পেশাদার-দেখতে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট:
প্রতারকরা আকর্ষণীয় পোস্ট, প্রচুর ফলোয়ার ও ভুয়া গ্রাহক প্রশংসা দেখিয়ে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস প্রোফাইল বানায় যাতে তারা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ:
সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলার কারণে ক্রেতারা মনে করেন তারা একজন আসল বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলছেন।ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে লেনদেন:
প্রতারকরা সাধারণত ইউপিআই, মোবাইল ওয়ালেট বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা নিতে চায়। টাকা পাঠানোর পর তারা উধাও হয়ে যায়।গায়েব হয়ে যাওয়া:
টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতারকরা সব যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয়, ফলে ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।
সতর্ক থাকার সংকেত#
- 🔴 অযাচাইকৃত অনলাইন বিক্রেতা: ফলোয়ার ও প্রশংসাপত্র থাকলেও সেগুলো ভুয়া হতে পারে।
- 🔴 তাড়াহুড়ো করে টাকা দিতে চাপ: দ্রুত টাকা দিতে বললে সতর্ক হোন।
- 🔴 কোনো অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যম নেই: বৈধ ব্যবসার সবসময় একাধিক যাচাইকৃত কাস্টমার কেয়ার চ্যানেল থাকে, শুধু ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নয়।
- 🔴 অতিরিক্ত ভালো অফার: অবাস্তবভাবে কম দাম বা সীমিত সময়ের অফার প্রতারণার কৌশল হতে পারে।
অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়#
বিক্রেতাকে যাচাই করুন:
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ভেরিফায়েড সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও অনলাইন রিভিউ দেখে নিন।
- শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশংসাপত্রের উপর নির্ভর করবেন না।
নিরাপদ পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন:
- শুধুমাত্র অফিসিয়াল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বা বায়ার প্রোটেকশন দেওয়া পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা দিন।
- অজানা বিক্রেতার কাছে সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার, ইউপিআই বা মোবাইল ওয়ালেটে টাকা পাঠাবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়ার অফার নিয়ে সন্দেহপ্রবণ হোন:
- ফলোয়ার সংখ্যা বা ঝকঝকে পোস্ট দেখে বিশ্বাস করবেন না।
- টাকা পাঠানোর আগে বিক্রেতার সত্যতা যাচাই করুন।
সব প্রমাণ সংরক্ষণ করুন:
- কথোপকথনের স্ক্রিনশট, টাকা পাঠানোর রসিদ ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখুন যাতে প্রয়োজনে অভিযোগ জানানো যায়।
তৎক্ষণাৎ প্রতারণা রিপোর্ট করুন:
- আপনার ব্যাংক বা পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মকে জানান।
- প্রতারণার সন্দেহ হলে সাইবারক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করুন।
মূল শিক্ষা#
অনলাইনে কেনাকাটা সুবিধাজনক হলেও সতর্ক না হলে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। প্রতারকরা এখন আরও চালাক হয়ে উঠেছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়া ও সরাসরি বার্তার মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। তাই সবসময় বিক্রেতাকে যাচাই করুন, নিরাপদ পেমেন্ট চ্যানেল ব্যবহার করুন এবং সন্দেহজনক আচরণের প্রতি সতর্ক থাকুন—এটাই অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়।